পূর্বাঞ্চল প্রভাতী সংঘের ৫৯ তম দুর্গাপূজার ভাবনা– "বিষাদ পুজোর গল্প"
বকুল দাশ :: কলকাতার জি. কে. রোড পূর্বাঞ্চল প্রভাতী সংঘ এবছর তারা ৫৯ তম বার্ষিকী দুর্গাপূজার আয়োজন করছে। এ বছর এই সঙ্ঘের ভাবনা "বিষাদ পুজোর গল্প"। আগামী ৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার দুর্গা পূজার অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবে প্রভাতী সংঘ।
বাঙালির বার মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ পার্বণ দুর্গোৎসব। আর ঢাকের বাদ্দি কানে এলে চোখ বুজেই বলে দেওয়া যায় মা আসছেন ঘরে ঘরে। দুর্গাপুজো আসন্ন।
দুর্গাপূজা এলেই আমরা আনন্দে মেতে উঠি। চারিদিকে বাহারি রোশনাই আলো। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। নতুন পোশাকে সেজে ওঠে কচি কাঁচা আবাল বৃদ্ধ বণিতারা। কিন্তু ঢাক 🥁 আর ঢাকি ছাড়া এই আনন্দ অনুষ্ঠান অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। এই ঢাকিরা নিজেদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে, সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে আমাদের এই আনন্দ যজ্ঞে আনন্দ দিতে সুদুর গ্রাম গঞ্জ থেকে বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে এসে হাজির হন তাঁরা। তাঁদের কথা আমরা ক'জন মনে রাখি ?
পূর্বাঞ্চল প্রভাতী সংঘ একটি ব্যতিক্রমী সংগঠন। এই সংগঠনের নবীন প্রবীণ সদস্যরা এবার তাঁদের দুর্গোৎসবে এই ঢাকিদের হৃদয়স্পর্শী জীবনগাথা তুলে ধরতে উদ্যোগ নিয়েছেন। যারা ঐতিহ্যবাহী ঢাক বাদক এবং যাদের জীবন দুর্গাপূজার পাঁচদিনকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। কিংবা এই মানুষদের কাছে ঢাক বাজানো মূল জীবিকা না হলেও, তাঁরা সারা বছর অপেক্ষা করেন এই ক'টা দিনের জন্য, যা তাঁদের রুজি রোজগারের পাশাপাশি আনন্দ এবং তৃপ্তি এনে দেয়। বছরের পর বছর তাঁরা এই ভাবেই পথ চলেন। পুজো শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তাঁদের এই স্বল্প সময়ের খ্যাতি ও আনন্দ মিলিয়ে যায়, আবার অপেক্ষার জীবন শুরু হয়।
এই ভাবনার মাধ্যমে, জি. কে. রোড পূর্বাঞ্চল প্রভাতী সংঘ চেষ্টা করেছে এই বাদ্যশিল্পীদের অজানা জীবনকথা তুলে ধরতে। তাঁদের আনন্দ ও বিষাদ এবং উৎসবের ওপর তাঁদের নির্ভরশীলতার কাহিনী বর্ণনা করতে।
রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথাই জানালেন পূর্বাঞ্চল প্রভাতী সংঘের কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তাঁদের মধ্যে অন্যতম মাসআর্ট এর সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি বসু, ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটির সভাপতি কাজল সরকার, সম্পাদক শাশ্বত বসু, বিশিষ্ট লেখিকা দেবারতি মুখোপাধ্যায়, দীপ প্রকাশনীর দীপ্তাংশু মন্ডল, উদ্যোগী সংগঠনের সভাপতি সঞ্জয় বাঙ্কা, যুগ্ম সম্পাদক মৃণাল মুখার্জী ও তন্ময় দাশগুপ্ত, কোষাধ্যক্ষ রাজীব কুন্ডু প্রমুখ। যাদের হাতের ছোঁয়ায় প্রভাতী সংঘের 'বিষাদ পুজোর গল্প' সেজে উঠবে সেই শিল্পীরা বিপাশা, সুজয়, দেবদাস, ভিকি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের অতিথিরা কমিটির এই প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এই জীবন কাহিনী শিল্প ও সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করবে। বক্তারা জানান, প্রতিবছর এই দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে রাজ্যে ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন হয়। সেখানে সাধারণ মানুষ থেকে ছোট বড় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হন।
Comments