সেপসিস সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে আইএসসিসিএম
সেপসিস সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে আইএসসিসিএম
সাজাহান সিরাজ : সেপসিস। কানে শোনায়, চার অক্ষরের একটি সুন্দর নাম। কিন্তু মানবদেহে একবার ঢুকলে শরীরটাকেই শেষ করে যেতে পারে সে। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, শরীরের যে কোন ইনফেকশন জনিত কারণে সেপসিস হতে পারে, যার জন্য অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO-র ২০১৭ সালের একটি হিসেবে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর বিশ্বে ৪ কোটি ৮৯ লক্ষ মানুষ সেপসিসে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে অর্ধেক পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। সেপসিস সংক্রমণে ২৯ লক্ষ ৫ বছরের কম শিশু সহ ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় এই সময়। কোভিড পরবর্তী সময়ে সংখ্যাটা আরো বেড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারতবর্ষের মত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সেপসিস সংক্রমণ হলে মৃত্যুর হার উন্নত দেশগুলি তুলনায় দ্বিগুণের বেশি হয়। তবে কিছু সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিলে সেপসিস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী।
ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন (আইএসসিসিএম) এর ৩০ তম বছর পূর্তি উপলক্ষে কলকাতায় সেপসিস নিয়ে এক সচেতনতামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই উপলক্ষে ১৭ নভেম্বর এক সাংবাদিক বৈঠকের সূচনা করে আইএসসিসিএম -এর কলকাতার শাখার সভাপতি ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা: সৌরেন পাঁজা জানান, মারাত্মক এই সংক্রমণ প্রতিরোধে ও রোগীর প্রাণ বাঁচাতে রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব দেওয়া বেশি জরুরি। যেকোনো ইনফেকশন থেকে শরীরে সেপসিস হতে পারে, সে শরীরে ঢুকলে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নষ্ট পর্যন্ত করে দিতেও পারে। তাই যেকোন ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি তাহলে হয়তো এই সেপসিস নাম মারণ থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি বলে তাঁর বিশ্বাস।
সাংবাদিক বৈঠকে ওই সংগঠনের কলকাতা শাখার সম্পাদক ডাক্তার শাশ্বতী সিনহা বলেন, আর্লি স্টেজে চিকিৎসা শুরু করলে সেপসিসে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। তিনি জানান, ছোট বাচ্চা, বয়স্ক, গর্ভবতী ও প্রসূতি যাদের ইমিউনিটি ক্ষমতা কম এবং যারা ক্রনিক অসুখে আক্রান্ত যেমন ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ, ক্যান্সার প্রকৃতিতে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে সেপসিস। কিন্তু সময় মতো চিকিৎসা শুরু হলে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা বাড়ে। তিনি জানান, ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন এর কলকাতা শাখার অভিজ্ঞ সদস্যরা অতি সম্প্রতি কলকাতার সাতটি হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি থাকা ৩০০ জনের বেশি রোগীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে জেনেছেন, এদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সেপসিসে আক্রান্ত। এই রোগীদের ৫২ শতাংশ ইমিউনিটি অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন অর্থাৎ স্বাস্থ্য পরিষেবার বাইরে থেকে সংক্রমণ হয়েছে, বাকি ৪৮ শতাংশ স্বাস্থ্য পরিষেবা চলাকালীন অবস্থায় সংক্রমিত। এই সমীক্ষা অনুসারে সব থেকে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে ফুসফুসে তারপর ইউরিনারি ট্র্যাক্টে।
সংবাদিক বৈঠকে ডাক্তার আসিফ ইকবাল জানান, সেপসিসে মৃত্যুর এক লক্ষের মধ্যে ভারতবর্ষের সংখ্যা ২১৩ জন, পাকিস্তানে এই সংখ্যা ২০৬, নেপালে ১৭৬, বাংলাদেশে ১৩৬, মালদ্বীপে সেখানে মাত্র ২৭ জন।
এদিনের এই সাংবাদিক বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ডাক্তার সৌভিক পান্ডা, ডাক্তার সুদীপ্ত মুখার্জী প্রমুখ।
Comments