বিড়ি শ্রমিকদের ভাগ্য এবং ভবিতব্য

বিড়ি শ্রমিকদের ভাগ্য এবং ভবিতব্য 

সাজাহান সিরাজ : ভারতীয় বিড়ি বিশ্বের বড় বড় বাজার দখল করলেও দেশের বিড়ি শিল্পীদের অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। তাঁরা যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই রয়ে গেছেন। পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় তাঁদের । কিন্তু এই শ্রমিকরা দিনের পর দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং শিল্পকে সন্তান সমতুল্য করে লালন পালন করে যাচ্ছেন। যাতে দেশ বৈদেশিক মুদ্রায় লাভবান হয়।
এই প্রকৃত শিল্পীদের আর্থিক পরিবর্তনের জন্য রাজ্য সরকার কিছুটা উদ্যোগী হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা দেখা যায় না। আর ফলে বিড়ি শ্রমিকরা আর্থিক মানদণ্ডে দিনে দিনে তলানিতে ঠেকে যাচ্ছেন।
 বিড়ি শ্রমিকদের জীবনযাত্রা, তাঁদের আর্থিক মান উন্নয়ন, তাঁদের স্বাস্থ্য সহ সার্বিক সমস্যা আলোচনায়, শ্রমিক ইউনিয়নগুলির ভূমিকা ও দায়িত্ব এবং সরকারের দায়বদ্ধতার বিষয় উঠে আসে।
টোবাকো ফ্রি জেনারেশন (TFG)র উদ্যোগে ২৫ জুন, মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এই আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সাথী ভট্টাচার্য, পরিবেশবিদ নব দত্ত, অধ্যাপক অচীন চক্রবর্তী, শ্রমিক নেতা মানস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। এই আলোচনায় ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন রাজ্যসভার তিনবারের সাংসদ দোল সেন। সঞ্চালনায় ছিলেন টিএফজি-র ডিরেক্টর ড. নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়। এদিন উদ্যোক্তা সংগঠনের পক্ষে বেশ কয়েকটি গবেষণা ধর্মী পেপার প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্যের ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা হলেও, দেশে এই যৌথ আন্দোলন গড়ে না ওঠায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে শ্রমিকদের সব দাবি দাওয়া ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না, কিম্বা পৌঁছালেও সরকার তাতে আমল দিচ্ছে না। তাঁরা জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় ২২ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে রয়েছেন প্রায় ১০ লক্ষ শ্রমিক। এই শ্রমিকদের প্রায় ১৯ লক্ষ অসংগঠিত। এরা সরকারের বেশিরভাগ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি সরকারের নির্ধারিত মজুরিও এরা পান না। অনুষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা স্বীকার করেন এই কাজে তাঁদেরও খামতি রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, চোরাই পথে বিড়ি পাতা কম দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এ ব্যাপারে সঠিক কোন তথ্য নেই সরকারের কাছে। তবুও রাজ্য থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি জিএসটি যাচ্ছে কেন্দ্রের কোষাগারে। 
সাংসদ দোলা সেন বিড়ি শ্রমিকদের উপর কেন্দ্রীয় বৈষম্যের সমালোচনা করেন। তিনি জানান, 'এ রাজ্যে বিড়ি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সমস্যায়, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন।' সংসদ বলেন, 'এই শ্রমিকদের পাশে আমরা যদি দাঁড়াতে না পারি, তাঁদের সুখ দুঃখে ভাগীদার না হতে পারি, তাহলে আগামী দিনে এইসব পরিবারের কেউ আর বিড়ি শিল্পে কাজ করতে আগ্রহ দেখাবে না।'
বিড়ি শিল্পে নানা সমস্যা। যত দিন যাবে তা আরো বাড়বে। বিশেষ করে বিড়ি শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের স্বাস্থ্য সমস্যা, আর্থিক অনটন, তবুও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডার বাড়াতে এই শিল্পের শিল্পীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

Comments

Popular posts from this blog

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপিত

'রিদমিক ড্যান্স অ্যান্ড ফিটনেস্ স্টুডিও' র বার্ষিক অনুষ্ঠান যেন সপ্তাকাশে রামধনু

৩ জানুয়ারি বড় পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে তিন প্রতিবাদী নারী কণ্ঠ 'আনন্দী'